নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত না হওয়ায় বেনাপোলে ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৭-০৫-২০২৫ ০৭:০১:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-০৫-২০২৫ ০৭:০১:০৮ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
বেনাপোল বন্দর এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। নানা কারণে মাসে তিন থেকে চার দিন সেখানে সকাল-সন্ধ্যা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। তার উপর রয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বেনাপোল ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
বন্দর এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে বন্দর এলাকা জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু জেনারেটরও যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন স্থবির হয়ে পড়ে যাবতীয় কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের স্থলপথে ভারতের সঙ্গে যে বাণিজ্য বা পাসপোর্টধারী যাতায়াত হয়ে থাকে তার ৮০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে। এক কিলোমিটারের বন্দর এলাকায় স্থাপিত রয়েছে বন্দর, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিস। এ ছাড়া বাণিজ্যিক স্বার্থে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানি-রফতানির সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও কয়েকশ প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে এসব সেক্টরে অনলাইন সংযুক্ত হওয়ায় ম্যানুয়াল পদ্ধতি একেবারেই উঠে গেছে। এতে বিদ্যুৎ নির্ভর হয়ে অনলাইন সার্ভারে কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করতে হয়। তবে বন্দর এলাকাটিতে প্রথম থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ। মাসের মধ্যে কমপক্ষে চারদিন বিদ্যুৎ অফিস দিনভর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে। এ ছাড়া প্রতিদিন দু’একবার লোডশেডিং তো আছেই। এতে বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সচল রাখাতে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না পেয়ে বাধ্য হয়ে এসব প্রতিষ্ঠান বিকল্প ব্যবস্থায় জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে। তবে টানা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা এসব জেনারেটর বিদ্যুৎ সাপ্লাইয়ের সক্ষমতা না থাকায় অচল হয়ে পড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম। কখনো আমদানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ছে আবার কখনো ইমিগ্রেশন কার্যক্রম ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ হয়ে পড়ায় আটকে পড়তে হচ্ছে পাসপোর্টধারীদের।
এদিকে, এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পাসপোর্টধারীরা। যাত্রী সেবায় ইমিগ্রেশন ও বন্দরে এসি বা ফ্যান থাকলেও চালান না কর্তৃপক্ষ। সরবরাহ নাই বিশুদ্ধ পানি পর্যন্ত। তবে ইমিগ্রেশন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রী সেবা বাড়াতে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনীতা উপলব্ধি করলেও ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হয়নি।
ভারতফেরত পাসপোর্টধারীরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় ইমিগ্রেশনে একঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে। বিদ্যুৎ থাকলেও এসি, ফ্যান চালান না তারা। গরমে ভোগান্তি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বিদ্যুতের অভাবে বাণিজ্য অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে। বন্দর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও ২২ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকেন। বছরে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায় এ বন্দর থেকে। বর্তমানে জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বাণিজ্য সম্পাদন করতে হচ্ছে। বন্দর, কাস্টমস ইমিগ্রেশনে জেনারেটর থাকলেও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে পারে না।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি ইব্রাহিম জানান, ‘শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আমাদের যে জেনারেটর আছে সেটা একটানা ৩ ঘণ্টার বেশি সার্ভিস দিতে পারে না। এ কারণে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে পড়ায় একঘণ্টার মত পাসপোর্টধারীদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে। যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা থাকা জরুরি বলে জানান তিনি।
বেনাপোল পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম হাসিবুল ইসলাম জানান, কোনো এলাকায় ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে হলে আলাদা একটা সাবস্টেশন, ৩৩ কেবি লাইন স্থাপন ও আলাদা একটা গ্রিড থেকে লোড নিতে হবে । কিন্তু এ ব্যবস্থা বেনাপোলে না থাকায় জরুরি কাজে বা দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তবে বেনাপোল বন্দরকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০ সালে বেনাপোল গ্রিড স্থাপন হয়েছে। এ ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম তাদের চলমান আছে।
বাংলা স্কুপ/প্রতিনিধি/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স